প্রচন্ড গরম। বিদ্যুৎ ও নেই, তাই মঈন চিন্তা করলো বাইরে গিয়ে নদীর পাড় দিয়ে একটু হেটে আসবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার ভাবলো, এতো রাতে বাইরে যাওয়া কি ঠিক হবে? আবার ভাবলো ঠিক না হবার কি আছে? সে এ গ্রামেরই ছেলে সবাই তাকে চেনে, এতো রাতে বাইরে দেখলেও সমস্যা হবার কথা না। মঈন ঘর থেকে বের হয়ে পাকা রাস্তা পার হয়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা নদীর তীর ধরে হাটতে শুরু করলো। এই গরমে এখানটায় একটু বাতাস পাওয়ায় ভালো লাগছে মঈনের। তাই নদীর তীরেই ঘাসের উপর বসে পরলো সে। বসে বসে এক মনে ভাবছে সে দেশের কথা দেশের মানুষের কথা, হঠাৎ পিছনে কিছু একটা পরার শব্দ পেলো মঈন। চমকে পিছনে তাকিয়ে যখন কিছু দেখতে পেলো না তখন দাড়িয়ে ভালো করে আবার লক্ষ্য করলো, তাতেও কিছু দেখতে পেলো না। মঈন মনে মনে ভাবলো, এটা নিশ্চয়ই তার মনের ভুল, তা না হলে এই ফাঁকা যায়্গায় হাড়িপাতিল পরার শব্দ আসবে কোথা থেকে? বাড়ি গুলো থেকে শব্দ আসলেওতো এরকম হবে না শব্দের তীব্রতা। ভাবনা আবার আসছে দেখে মঈন অন্য কিছুর ভাবনা দিয়ে দিয়ে এটা ঢাকবার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না, বারবার তার মনে কিছুক্ষণ আগে শোনা শব্দের চিন্তা আসতে লাগলো। মঈন ভাবলো, না শুধু শুধু এখানে থেকে আর কাজ নেই, এর চেয়ে বাড়িতে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করা যাক। এটা ভেবেই মঈন বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলো। কয়েক পা এগুতেই তার মনেহলো কে যেন তার পিছু নিয়েছে। সে চট করে পিছন ফিরে দেখলো কেউ নেই। সে আবার হাটা শুরু করলো বাড়ির দিকে, ঠিক তখনি তার চারপাশে খুব দ্রূত কিছু একটা জিনিস একটি পাক দিল। থমকে দাড়ালো মঈন, সে ভূত প্রেত বিশ্বাস করে না, তার বার বার মনে হতে থাকলো এটা তার মনের ভুল। কিন্তু মনের ভিতরে কোথায় যেন একটু ভয় লুকিয়ে ছিল সেটি বেরিয়ে এল। মঈনের একটু একটু ভয় লাগতে শুরু করেছে। এই সময় মঈন পিছন থেকে অনেক সুন্দর নারী কন্ঠের কথা শুনতে পেল। কোন মেয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, '' তুমি অনেক সাহসী মঈন এ পর্যন্তই অনেকে সইতে পারে না, তার আগেই জ্ঞান হারায়। '' মঈন ধীরে ধীরে পিছন ফিরলো আর সঙ্গে সঙ্গে তার সমস্ত ভয় দূর হয়ে গেল। এমন স্বর্গের পরীর মতো সুন্দর মেয়েকে ভয় পাবার কিছু নেই, ভূত প্রেত এতো সুন্দর হতে পারে না। মেয়েটি আবার বলল, এসো মঈন তোমাকে আমি গল্প শোনাব। মঈন ধীরে ধীরে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গেল। মেয়েটি বলতে শুরু করল, জানো মঈন, এখানে অনেক অনেক বছর আগে নদী ছিল না। এখানে একটা বিড়াট রাজ প্রাসাদ ছিল, তুমি ছিলে সেই রাজ্যের রাজকুমার। মঈন যেন কিছু শুনছে না, সে শুধু এই অপরূপা সুন্দরিকে দেখছে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন ঠান্ডা হাওয়া এসে লাগলো মঈনের গায়ে। মঈনের খুব শীত লাগতে শুরু করেছে। মেয়েটিকি তার গায়ে কোন গরম কাপড় দিয়ে দেবে না? মেয়েটির তো অনেক ক্ষমতা, সে এই ঠান্ডা হাওয়া থেকে কি তাকে বাঁচাবে না? দেখতে দেখতে শীত সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে, মঈন ঠক ঠক করে কাঁপছে। তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে। কে যেন তার গায়ে কাপড় দিয়ে দিল, মেয়েটি নয়, মেয়েটি নেই। মেয়েটি যেন কোথায় হারিয়ে গেছে, নেই সেই নদীর তীর, এটাতো মঈনের বিছানা। তবে সেই হাড় কাঁপানো শীত আছে। কেউ একজন তার গায়ে কাথা আর কম্বল টেনে দিয়েছে। মঈন চোখ মেলে তার মাকে দেখতে পায় যিনি তার গায়ে কাপড় টেনে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মা মঈনের কপালে হাত রেখে বললেন, জ্বরেতো গা পুড়ে যাচ্ছে, এদিকে মাথা দেতো বাবা মাথায় পানি দিতে হবে। Apr 29/14( www.fb.com/shadi.bd)
No comments:
Post a Comment