Tuesday 13 May 2014

“ঐশী”

আজিজ সাহেবের একমাত্র মেয়ের নাম ঐশী। খুবই শান্তশিষ্ট মেয়ে। মা মরা মেয়েটিকে আজিজ সাহেব অনেক কষ্টে এত বড় করেছেন। ঐশী ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার এর ছাত্রী, পড়াশুনায়ও ভাল। আজিজ সাহেব বসার ঘরে বসে টিভি দেখছেন এমন সময় ঐশী কলেজ থেকে ফিরল। আজিজ সাহেব ডাকলেন তাকে, -আম্মা এইদিকে আস। ঐশী কাছে আসতেই আজিজ সাহেব তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন আর বললেন, -এত্ত বড় মেয়ে হয়েছ তার পরেও ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়ানো। ঐশী বলল, -আব্বা, আমিতো কলেজ থেকে সরাসরি। -চুপ কর বদমাস মেয়ে।আবার মুখের উপর কথা বলে। ঐশী তার রুমের দিকে রওয়ানা দিল। আজিজ সাহেব আর কিছু বললেন না। ঐশী তার রুমে গিয়ে ভাবছে তার বাবার কি হল, তিনিতো কখনও ঐশীকে মারেন নি তাহলে আজ কেন বিনা দোষে মারলেন? এতক্ষণ ঐশী শুধু অবাক হয়েছে এখন তার চোখে পানি এসে গেল। ওদিকে আজিজ সাহেবের মনেও শান্তি নেই। আজ তাঁর কি হয়েছে তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। সকালে পত্রিকা পড়ার পর থেকে নিজের মেয়েকে তিনি সহ্য করতে পারছেন না। অসহ্য লাগার তো কোন কারণ নেই। পুলিশ অফিসারের খুনী মেয়ের সাথে তাঁর মেয়েকে কেন তুলনা করবেন তিনি? প্রশ্ন জাগে মনে । তার পরেও কেন যেন অসহ্য লাগে নিজের মেয়েকে। রাতে খাবার টেবিলে আজিজ সাহেব একটি পাগলামী করলেন। কিছুটা খাবার পর নিজের প্লেট মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, -এটা তুমি নাও আর তোমারটা আমায় দাও। ঐশী কিছু না বলে নিজের প্লেট এগিয়ে দেয়। খাওয়া শেষ হলে ঐশী চলে যায়। আজিজ সাহেব ভাবেন, ছিঃ ছিঃ ছিঃ এ আমি কি ভাবছি, আমার মেয়ে আমাকে বিষ খাওয়াবে ? মাথায় প্রচন্ড চাপ অনুভব করেন আজিজ সাহেব। ঐশী নিজের ঘরে গিয়ে ভাবে, তার বাবার কি হল আজ? তিনি এমন করছেন কেন? সেই রাতে আজিজ সাহেবের শরীর কাঁপিয়ে প্রচন্ড জ্বর আসে এবং তিনি মুখ দিয়ে শব্দ করতে থাকেন। পাশের রুমে ঐশীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে বাবার রুমে এসে দেখে বাবা ছটফট করছেন। ঐশী কাছে গিয়ে তার বাবার শরীর স্পর্শ করে বুঝতে পারে প্রচন্ড জ্বর এসেছে। এত রাতে ডাক্তার আনাও যাবে না।তাহলে সে এখন কি করবে? এসব যখন ভাবছে তখন আজিজ সাহেব চোখ খুলে ঐশীকে দেখে একটা চড় মেরে বললেন, -বদমাশ মেয়ে, বাবাকে মারতে এসেছিস, দূর হ এখান থেকে। ঐশী ওখান থেকে বাথরুমে চলে যায় এমং এক বালতি পানি নিয়ে বাবার মাথার কাছে যায়। আজিজ সাহেব ধীরে ধীরে বলছেন, -সাহস কত, নিজের বাপকে মারতে চায়। ঐশী বাবার শরীর টাকে ধরে মাথাটাকে একটু পাশে নিয়ে বাবার মাথায় পানি ঢালতে থাকে। অন্যদিকে আজিজ সাহেব তাকে গালাগালি করে চলেন। ঘন্টা খানেক পর জ্বর ছেড়ে যায়। আর আজিজ সাহেব ঘুমিয়ে পরেন। ঐশী আর নিজের ঘরে যায় না বাবার মাথার পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে বসে থেকে বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ফজরের আজান দেয়ার সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে যায় আজিজ সাহেবের। তিনি দেখতে পান মেয়ে তাঁর মাথায় হাত রেখে ঝিমুচ্ছে। গতকালকের এবং গত রাতের ঘটনা তাঁর মনে পড়ল। চোখে পানি এসে গেল তাঁর। এমন ভাল এবং লক্ষী একটা মেয়েকে নিয়ে তিনি কি ভেবেছেন তাই ভেবে চোখ ভিজে যাচ্ছে। তিনি চোখ মুছে মেয়েকে ডাকলেন, -আম্মা উঠ, যাও ওজু করে নামাজ পড়। ঐশী বলল, -আব্বা আপনি ঠিক আছেন? আজিজ সাহেব বললেন, -হ্যাঁ তুমি যাও, আমিও নামাজ পড়ব। ঐশী চলে গেল। আজিজ সাহেব ওজু করে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে খোদার কাছে মেয়ের জন্য দোয়া করলেন। আরো দোয়া করলেন যেন তাঁর সন্তান ঐশীর মত মেয়ে প্রত্যেক ঘরে জন্ম নেয়। উৎসর্গঃ ভাল ছেলে মেয়েদেরকে..…..….…বুঝতে হবে নামে নয় কামে পরিচয়। Sep 10, 2013 www.fb.com/shadi.bd

No comments:

Post a Comment