Wednesday 14 May 2014

এদেশের চলচ্চিত্রকে ধ্বংসের পায়্তারা।

অনেকেই জানে না আমাদের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নাম কী। তারা জানে আমেরিকায় হলিউড, শাহরুখ সালমান দের বোম্বেতে বলিউড। তারা এটাও জানে যে জিৎ দেবদের ইন্ডাস্ট্রির নাম টালিউড। তারা শুধু এটাই জানে না যে নিজেদের দেশের ফিল্ম ইনডাস্ট্রির নাম ঢালিউড। শাকিব খান আর অনন্ত জলিল মানে হলো হাসি আর হাসি। এটা বড়ই দুঃখের ব্যাপার। গত কয়েক বছরের তুলনায় এখন আমাদের ফিল্মের অনেকটা উন্নতি হয়েছে, অনেকেই চেষ্টায় আছেন উন্নতির জন্য। কিন্তু আমরা কি করছি? ঘরে বসে ভারতীয় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মুভি দেখছি আর বলছি বাংলা সিনেমা হইলো বস্তা পঁচা। কেউ বুঝতে চেষ্টা করি না, টাকা উঠাতে পারলে প্রযোজক টাকা ঢালবে না কেন আর টাকা উঠাতে না পারলে বেশি টাকা ঢালবে কেন? বলিউড থেকে বছরে প্রায় ৩০০ ছবি মুক্তি পায় আর সেখান থেকে সালমান আমিরদের ৫ থেকে ৬ টা ছবি আমরা দেখি সাধারণতো, আর সেই শত কোটি টাকা বাজেটের ছবির সাথে ১ থেকে দের কোটি টাকার বাংলা ছবির তুলনা করি। এ যেন পিঁপড়াকে খেয়ে খেয়ে হাতির মত ওজন বানাতে বলার মত। খুব সহজে বলে দিতে পারেন কম বাজেটে ভাল ছবি বানানো যায় যেমন মনপুরা। হ্যাঁ, আপনাদের সেই এক কথা সেটা হলো মনপুরা। কোথায় সেই মনপুরার পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম? পাঁচ বছর আগে এক মনপুরা বানিয়ে এখন তার খোঁজ নেই কেন? এক সময় আমার উপজেলায় পাঁচটি সিনেমা হল ছিল আজ একটিও নেই। মূলত মনপুরা টাইপের সিনেমা দিয়ে সারাবছর হল চালানো যায় না, মনপুরা বানাতে হয় প্রতি যুগে যুগে একটি করে তাহলেই মানুষ পছন্দ করে। শাকিব খানের নাম শুনলে বেশিরভাগ স্মার্ট নামের ছেলে মেয়েরা নাক ছিটকায় আরিফ আর হোসাইন রা সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লেখে কেননা বিশ্বের মানুষ তাকে চেনে আর শাকিব খানকে চেনে বাংলার সাধারণ মানুষ তাই তাকে নিয়ে লেখে না। নাক ছিটকানো মানুষ গুলোকি কখনও স্টার সিনেপ্লেক্স আর ব্লকবাস্টার এর বাইরে মফস্বল শহর গুলোতে গিয়ে দেখেছিলেন সেখানে হল মালিকদের পেট চালায় কে? দেশের বেশিরভাগ সিনেমা হলে এখনও অশ্লীল সিনেমা চলে কেননা এদেশের ইন্ডাস্ট্রি পর্যাপ্ত সিনেমা দিতে পারে না আর কিছু হল মালিকেরা চলে শাকিব খানের ছবি দিয়ে। অথচ অনেকেই বলেন শাকিবের উচিৎ বছরে দুই একটি সিনেমা করা। কিছুদিন আগে কোলকাতার প্রসেনজিত, জিৎ এরা এসেছিলেন বাংলাদেশে। এফডিসিতে বৈঠকও করেছেন এদেশের অনেকের সাথে। পত্রিকার মাধ্যমে হয়্তো এসব আপনারা জানেন। তারা এসেছিলেন বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আলুর মতো ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাজার তৈরী করতে। তারা তিস্তার পানি আটকিয়ে উত্তর বাংলাকে মরু চর করে রেখেছেন। যখন এদেশের চাষীরা আলুর চাষ করে লাভের মুখ দেখতে চায় ঠিক তখনই ওরা কম দামে আলু পাঠিয়ে চাষিদের মুখের হাসি কেরে নেয় আবার কিছুদিন পর চাষীদের আলু শেষ হলে তারা তাদের আলুর দাম অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এভাবেই তারা আমাদেরকে শোষণ করছে। আর আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে নিজেরা হাসছি। নিজেদের চলচ্চিত্রের করুণ অবস্থা থেকে উত্তোলনের চেষ্টা না করে বিদেশি চলচ্চিত্রের দিকে ঝুকছি, এ যেন নিজের মা কানা বলে প্রতিবেশি মহিলাকে মায়ের জায়্গায় বসানোর মতো। এই ফেসবুকে দেশপ্রেম নিয়ে লেখার মত অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা শত শত লাইক পায় এগুলা লিখে কিন্তু তাদের লেখায় চলচ্চিত্র ব্যাপারটি উঠে আসে না কেন এটা ভাববার বিষয়। তাদের হয়্তো ধারণা বাংলায় সিনেমা হয় না হয় শুধু ছিঃনেমা। তাদের কাছে সানি লিওন হলো স্টার অভিনেত্রি আর মৌসুমী শাবনুর হলো খ্যাত, কেননা সানি লিওন পরে বিকিনি আর মৌসুমী শাবনুরেরা পরে শাড়ি অথবা সালোয়ার কামিজ। কোথাও লেখা দেখেছিলাম একটি দেশকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে তার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হবে। ঠিক সেই কাজটি আজ হতে চলেছে, প্রসেনসিতেরা এদেশে বাজার তৈরীর সরাসরি চেষ্টায় সফল না হয়ে নিয়েছে অন্য পথের অবলম্বন আর সেটার নাম হলো যৌথ প্রযোজনা। মূলত চলচ্চিত্র জগতের কিছু মানুষকে কিনে নিয়ে কোলকাতার দাদারা অর্থাৎ একাত্তরের রাজাকার দালালদের মতো আজ কিছু ভারতের দালাল সৃষ্টি হয়েছে। তারা যৌথ প্রযোজনার নামে ভারতীয় বাংলা ছবি এদেশে প্রচারের ব্যবস্থা করছে, আর সেই কাজে তারা সফল হয়েছে। আর এর দ্বারাই ধীরে ধীরে বিলুপ্তি ঘটবে ডালিউড নামের ইনডাস্ট্রির যদি না আমরা রুখে দাড়াই। আফসোস, ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতি ভারতীয় সরকারের যেমন সুনজর রয়েছে আমাদের সরকার তেমন করে আমাদের চলচ্চিত্রকে দেখে না। কয়েকদিন আগে অপু বিশ্বাসের পছন্দের ছেলে কেমন প্রথম আলোর এমন একটি রিপোর্টে এদেশের ভদ্র ছেলেরা খুব বাজে কথা লিখেছে। প্রায় সবার কমেন্ট ছিল খারাপ ভাষার। অথচ, অপু বিশ্বাসের কোন সেক্স ভিডিও বাজারে আসে নাই আবার কারো সাথে রাত কাটাবার রিপোর্টও পাওয়া যায় নাই, তাহলে কেন এমন মন্তব্য? বাংলা সিনেমার নায়িকা বলে? আমরা কতোটা বৈষম্যের শিকার সেটা সবাই জানে। এদেশে দেশীয় টিভি চ্যানেলের চেয়ে ভারতীয় চ্যানেল বেশি অথচ আমাদের একটি চ্যানেলও ওদের দেশে দেখানো হয় না। আমরা ওদের সিনেমা থেকে ড্রামা সিরিয়ালের সবাইকেই চিনি প্রায় কিন্তু ওরা আমাদের বড় বড় তারকাদের চেনে না কারণ ওদের মিডিয়া ওদেরকে জানায় না অথচ আমাদের মিডিয়া সারা জীবন ভারতের দালালি করে আসছে। এই সময় ভারতীয় চলচ্চিত্র যৌথ প্রযোজনার নামে আমদানী কতো বড় হুমকি সরূপ তা আর মনেহয় আপনাদের বুঝাতে হবে না। এখন নিজ নিজ অবস্থানে থেকে চেষ্টা করুন যা করতে পারেন। www.facebook.com/shadi.bd

No comments:

Post a Comment