Tuesday 13 May 2014

রাণী ও রাজকন্যার গল্প

নায়্লা তার মেয়েকে ঘুম পারাচ্ছে ঘুম পারানির গান গেয়ে। খুকু ঘুমালো পাড়া জুড়োলো বর্গী এল দেশে। নায়্লার মেয়ে বলল, -বর্গীর গান শুনব না। রাজা রাণীর গল্প বল আম্বু। নায়্লা বলল, -শুদ্ধ করে বল, আম্মু বল। -না। -কেন? -তুমিতো বল, তুমিই আমার মা আবার তুমিই আমার বাবা।তাই আব্বু আর আম্মু মিলে তুমি হয়েছ আম্বু। নায়্লা হেসে ফেলল দেখাদেখি মেয়েও। নায়্লা মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল, -তোমার বয়স কত? -ছয় বছর তিন মাস তেত্রিশ দিন। -ও। -আম্বু তুমি না ইদানিং কেমন যেন উদাশীন হয়ে যাচ্ছ। -কেন? -এই যে আমি বললাম, তিন মাস তেত্রিশ দিন। তুমিতো কিছু বললে না? -কি বলব? -কেন আমি চার মাস তিন দিন বললাম না সেটাতো জানতে চাইলে না? -কেন? -এমনি এমনি। বলেই ফিক করে হাসল মেয়েটি। নায়্লা বলল, -তুই বড় হবি কবে? -আমিতো বড় হয়েছি। দেখবে কয়েকদিন পর আমি তোমাকে রোযগার করে খাওয়াব। নায়্লা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মেয়েকে ঘুমানোর জন্য বলল। নায়্লার মনের ভিতর এখন অতীতের স্মৃতি ঘুরে বেরাচ্ছে, সময় মত তা অশ্রু হয়ে বের হবে চোখ দিয়ে। নাহিদের সাথে কাটানো প্রত্যেকটি মূহুর্তের কথা এখন মনে পরছে নায়্লার। নাহিদের সাথে রিকশায় ঘোরা,ফুচকা খাওয়া। ভালবাসা দিবসে সব প্রেমিক প্রেমিকারাই একে অপরকে অন্তত কয়েকটা গোলাপ গিফ্ট করে কিন্তু নাহিদ নায়্লাকে কিছুই দিত না। সে বলতো, আজ তো সবাই সবাই কে দেবে আমি তোমাকে অন্যদিন দেব। নাহিদের পছন্দ না তাই নায়্লাও কিছু কিনতো না নাহিদের জন্য। নাহিদ আইসক্রিম খেতে পারতো না, খেলে তার টনসিল ফুলে যেত। এর জন্য নায়্লাও আইসক্রিম খাওয়া ছেড়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু নাহিদ তাতে রাজী হয়্নি, নায়্লার আইসক্রিম খাওয়া দেখতে নাকি ওর খুব ভাল লাগতো। এক সন্ধ্যায় নায়্লা নাহিদ কে কনকনে শীতের মাঝেও লেকের কোমর পানিতে নামিয়ে রেখেছিল। নাহিদ প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার সময় নায়্লাকে বলেছিল তোমার জন্য আমি সব করতে পারি, তাই সেটার পরীক্ষা নিয়েছিল নায়্লা। শীতে যখন নাহিদ কাঁপছিল তখন নায়্লা খিলখিল করে হাসছিল আর সেটা দেখেই নাহিদ এই মানবী পরীটিকে আরো বেশি ভালবেসে ফেলছিল। তাদের সময় ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে নায়্লার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নাহিদের হাত ধরে নায়্লা। তারা বিয়ে করে একটা ছোট্ট সংসার এর সূচনা করে। নাহিদ একটা ছোট খাটো চাকুরী শুরু করে, সংসারে সাহায্যের করার জন্য নায়্লাও একটা চাকুরীতে যোগ দেয়। নতুন সংসারে তাদের সব চেয়ে সাহায্য করেছে তাদের শিক্ষা। তারা দুজনেই পড়াশুনা প্রায় শেষ করায় তারাতারি চাকুরী যোগার করে সংসার দার করাতে পেরেছিল। সংসার ভালভাবেই চলছিল তাই বছর দুই পর তারা একটা বেবি নেবার সিদ্ধান্ত নেয়। নায়্লার মেয়েটির জন্মের কিছুদিন আগেই দূর্ঘটনায় মারা যায় নাহিদ। নায়্লা কখনও তার পরিবারের কাছে ফিরে যায়্নি, তারাও আসেনি নায়্লার কষ্টের জীবন দেখতে। মেয়েটি মায়ের চোখ থেকে পানি পরা দেখছে, সেও কাঁদছে। সে জানে না তার মা কেন কাঁদছে তার পরেও মায়ের কান্না দেখে সে তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। এক সময় মেয়েটি শব্দকরে কাঁদতে থাকে। নায়্লা ঘুরে তাকায় মেয়ের দিকে, তাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর যখন কান্না থেমে যায় তখন সে মেয়েকে শুইয়ে দেয়। মেয়েটি রাজা রাণীর গল্প শুনতে চায়। নায়্লা শুরু করে, 'এক দেশে এক রাণী আর তার ফুটফুটে রাজকন্যা থাকতো ' মেয়ে প্রশ্ন করে, 'রাজা কোথায়?' নায়্লা বলে, 'রাজা যুদ্ধে গেছে, সে এক মহাযুদ্ধ। যেখানে সবাইকেই যেতে হবে একদিন ' march 24/14 www.fb.com/shadi.bd

No comments:

Post a Comment